
বাংলাদেশের নদীভাঙন আজ একটি ভয়াবহ বাস্তবতা। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নদী ভাঙনের ফলে শত শত মানুষ গৃহহীন হয়, জমি হারায়, ও জীবন-জীবিকা চরম অনিশ্চয়তায় পড়ে। বিশেষ করে পদ্মা, যমুনা, মেঘনা এবং তিস্তা নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোতে নদীভাঙন এখন এক স্থায়ী দুর্যোগে রূপ নিয়েছে।গত কয়েক সপ্তাহে সিরাজগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, লক্ষ্মীপুর এবং শরীয়তপুরে ব্যাপক নদীভাঙনের খবর পাওয়া গেছে। অনেক এলাকায় রাতের অন্ধকারে হঠাৎ ভেঙে পড়ে বসতবাড়ি, কৃষিজমি চলে যায় নদীগর্ভে। বহু মানুষ আশ্রয় নিয়েছে স্থানীয় স্কুল, বাঁধের পাশ কিংবা ত্রাণকেন্দ্রে।একজন ভুক্তভোগী সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী উপজেলার আব্দুল কুদ্দুস বলেন,
“প্রতি বছর ভাঙনে ঘর হারাই। এবার তো জমিটাও গেলো। এখন বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে কোথায় থাকবো তাই বুঝতেছি না।”
নদীভাঙনের কারণে শুধু ঘরবাড়ি নয়, হারিয়ে যাচ্ছে মানুষের স্মৃতি, সংস্কৃতি ও শেকড়। অনেক শিক্ষার্থী শিক্ষা জীবন থেকে ছিটকে পড়ছে, বহু পরিবারকে বাধ্য হয়ে শহরের বস্তিতে আশ্রয় নিতে হচ্ছে। দিনমজুর, কৃষক, জেলে—সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারাই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিবর্ষণ, উজানের ঢল, নদীর স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা এবং অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ এ সমস্যার পেছনে মূল কারণ। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবও নদীভাঙনকে ত্বরান্বিত করছে।
সরকার কিছু এলাকায় জিও ব্যাগ ও বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে পরিস্থিতি মোকাবেলার চেষ্টা করছে। তবে স্থায়ী সমাধানের জন্য নদী শাসন, পাড় বাঁধাই, পুনর্বাসন এবং পরিবেশবান্ধব পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি।
আজকের নদীভাঙন শুধু একটি এলাকার সমস্যা নয়—এটি একটি জাতীয় সংকট। ভাঙছে নদী মানেই কাঁদছে মানুষ, আর সেই কান্না প্রতিদিন ভারী করে তুলছে দেশের বুক।
শেষ কথা:
নদী আমাদের জীবন, অথচ সেই নদীই এখন মৃত্যুদূত হয়ে উঠছে অনেকের জন্য। সময় এসেছে এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে সরকার, বিশেষজ্ঞ
ও জনগণকে একযোগে কাজ করার।