১১ ই নভেম্বর ২০২৫ ইং মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭.০০ টায়
বাংলাদেশ জাতীয় শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে, পূর্ব-পশ্চিম নাট্যাঙ্গনের প্রযোজনায় ও জনি মাহমুদ এর নির্দেশনায় বিধায়ক ভট্টাচার্যের লেখা একটি জনপ্রিয় নাটক ‘তাহার নামটি রঞ্জনা’ মঞ্চে মঞ্চস্থ করা হয়।
এক অন্যরকম মুগ্ধতা ছড়িয়ে মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর ২০২৫) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হল মুখরিত ছিল দর্শকদের উচ্ছ্বাসে। মঞ্চস্থ হলো পূর্ব-পশ্চিম নাট্যাঙ্গনের অন্যতম সফল প্রযোজনা, প্রখ্যাত নাট্যকার বিধায়ক ভট্টাচার্য্যের কালজয়ী সৃষ্টি “তাহার নামটি রঞ্জনা”। জনি মাহমুদের নির্দেশনা ও শিল্পীদের নিপুণ অভিনয়ে নাটকটি যেন নতুন করে প্রাণ পেল ঢাকার মঞ্চে।
নাটকের প্রেক্ষাপট ও শৈল্পিক উৎকর্ষ
’তাহার নামটি রঞ্জনা’ নাটকটি বহু পুরোনো হলেও এর কাহিনি, সামাজিক প্রেক্ষিত ও মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা আজও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। নাটকটিতে মূলত মানুষের সম্পর্ক, প্রেম, বঞ্চনা এবং আত্ম-অনুসন্ধানের এক গভীর চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। বিধায়ক ভট্টাচার্যের লেখনী সমাজ ও ব্যক্তির ভেতরের দ্বান্দ্বিকতাকে অত্যন্ত সংবেদনশীলভাবে উপস্থাপন করে, যা এটিকে আজও জনপ্রিয়তার শীর্ষে রেখেছে।
নির্দেশক জনি মাহমুদ মূল নাটকের আবেদন অক্ষুণ্ণ রেখেও আধুনিক মঞ্চসজ্জা ও আলোক ব্যবহারের মাধ্যমে একটি সমসাময়িক মাত্রা যোগ করেছেন। নাটকের প্রতিটি দৃশ্যে আলো-ছায়ার ব্যবহার কাহিনির আবেগ ও গভীরতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। নির্দেশকের মুন্সিয়ানায় মঞ্চটি যেন নিছক একটি স্থান না থেকে নাটকের এক অবিচ্ছেদ্য চরিত্র হয়ে উঠেছিল।
অভিনয় ও নির্দেশনা
কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করা শিল্পী ‘রঞ্জনা’-র ভূমিকায় ছিলেন অত্যন্ত সাবলীল। চরিত্রের মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েন, ভালোবাসা ও হতাশার মিশ্র অনুভূতিকে তিনি যেভাবে মঞ্চে তুলে ধরেছেন, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। অন্যান্য পার্শ্বচরিত্রগুলোও তাদের ভূমিকায় ছিলেন উজ্জ্বল ও স্বচ্ছন্দ। বিশেষ করে সংলাপ প্রক্ষেপণ এবং শারীরিক ভাষা— উভয় ক্ষেত্রেই শিল্পীরা ছিলেন অত্যন্ত পেশাদার। পূর্ব-পশ্চিম নাট্যাঙ্গনের দীর্ঘদিনের মঞ্চ অভিজ্ঞতা তাদের সম্মিলিত অভিনয়কে এক সমন্বিত ও শক্তিশালী রূপ দিয়েছে।
ভবিষ্যৎ ও প্রত্যাশা
এ ধরনের মানসম্পন্ন নাটক মঞ্চস্থ হওয়া ঢাকার নাট্য আন্দোলনে নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক বার্তা বহন করে। ‘তাহার নামটি রঞ্জনা’-র এই সফল মঞ্চায়ন প্রমাণ করে যে, দর্শকদের মধ্যে এখনো ভালো নাটকের প্রতি আগ্রহ বিদ্যমান। পূর্ব-পশ্চিম নাট্যাঙ্গন নিয়মিত বিরতিতে এমন দর্শক-নন্দিত প্রযোজনা মঞ্চে নিয়ে আসবে বলে নাট্যপ্রেমীরা প্রত্যাশা করেন।
স্টুডিও থিয়েটার হল ছিল কানায় কানায় পূর্ণ, যা মঞ্চনাটকের প্রতি দর্শকদের গভীর আগ্রহের পরিচায়ক। মঞ্চায়নের সফল সমাপ্তি ঘোষণা করে হলভর্তি দর্শকদের দীর্ঘ করতালি প্রমাণ করে, এটি ছিল শিল্পকলা একাডেমির একটি স্মরণীয় মঞ্চায়ন।